Monday, December 15, 2025

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন কে এই ফয়সাল?

আরও পড়ুন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার একদিন পর (১২ ডিসেম্বর) ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা টক অব দ্য কান্ট্রি। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামে একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ, যার গুলি করার সিসিটিভির ফুটেজ এবং হাদির প্রচারণায় ছদ্মবেশে অংশ নেওয়ার ছবি নিয়ে নানা মাধ্যমে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। 

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে কে এই ফয়সাল করিম মাসুদ? কি বা তার আসল পরিচয়?

জানা গেছে, ফয়সাল করিম নামের এই ব্যক্তি কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। পেশাদারদের যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। এই অ্যাকাউন্টটি যে ফয়সালেরই তা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নিশ্চিত করেছেন। লিংকডইনে ফয়সাল নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  নতুন এমপিও নীতিমালা প্রকাশ, এল বড় পরিবর্তন

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

আরও পড়ুনঃ  জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রহস্যময় বার্তা দিলেন:প্রধান উপদেষ্টা

এ ছাড়া ২০২৪ সালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম। পরে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তার বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এলো। 

এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি এত অল্প সময়ের (৩ মাস ৮ দিন) মধ্যে কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। এ নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

এদিকে, এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ওই সন্দেহভাজনের ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আরও পড়ুনঃ  খালেদা জিয়ার সিটিস্ক্যান রিপোর্ট নিয়ে যা জানা গেল, আসতে পারে যে সিদ্ধান্ত।

অন্যদিকে, ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। 

এর আগে, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে নির্বাচনি প্রচারণাকালে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এরপর অপারেশন শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় তার সঙ্গে ফয়সাল করিমের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ছবি রয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে গুলি করা ব্যক্তির চেহারার সাদৃশ্য থাকায় গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ